রসায়ন

ধাতু নিষ্কাশন

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - রসায়ন - খনিজ সম্পদ: ধাতু অধাতু | NCTB BOOK

যে পদ্ধতিতে আকরিক থেকে ধাতু সংগ্রহ করা হয় তাকে ধাতু নিষ্কাশন বলে। বিভিন্ন ধাতুর ধর্মও বিভিন্ন। সে কারণে সকল ধাতুকে পৃথক করতে নির্দিষ্ট কোনো একটি প্রক্রিয়া নেই। তাই বিভিন্ন ধাতুর নিষ্কাশন প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা থাকে। কিছু কিছু অসক্রিয় ধাতু যেমন— সোনা, প্লাটিনাম এগুলোকে কখনো কখনো বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। কিন্তু কম বা অধিক সক্রির ধাতুসমূহ সাধারণত যৌগ হিসেবে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় যেমন, ধাতুসমূহের অক্সাইড, সালফাইড, নাইট্রেট, কার্বনেট ও অন্যান্য অনেক প্রকার যৌগ হিসেবে। তাই সক্রিয় ধাতুসমূহের যৌগগুলোকে বিজারিত করে বা তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় তাদের যৌগ থেকে পৃথক করা হয়। ধাতু আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশনের অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। ধাপগুলো হলো (i) আকরিককে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা (ii) আকরিক এর ঘনীকরণ (iii) অনীকৃত আকরিককে অক্সাইডে রূপান্তর (iv) ধাতব অক্সাইডকে মুগ্ধ ধাতুতে রূপান্তর (v) ধাতু বিশুদ্ধিকরণ। তবে একটি নির্দিষ্ট ধাতুর জন্য সব সময় সবগুলো ধাপ প্রযোজ্য নয়। প্রত্যেকটি ধাতুর ধর্মের উপর ভিত্তি করেই সেই ধাতুর জন্য প্রযোজ্য ধাপগুলো ব্যবহার করতে হবে। নিচে বিভিন্ন ধাপ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
 

(i) আকরিককে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা 

সাধারণত খনি থেকে যে আকরিককে উত্তোলন করা হয় তা যদি বড় এবং কঠিন শিলাখণ্ড হয় তবে এই কঠিন শিলাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হয়। প্রথমে শিলাখন্ডকে জো ক্রাশারের সাহায্যে ছোট ছোট টুকরায় পরিণত করা হয় এবং তারপর বল ক্রাশারের সাহায্যে আকরিকের ছোট ছোট টুকরাকে মিহি দানায় বা পাউডারে পরিণত করা হয়।
 

(11) আকরিক এর ঘনীকরণ
সাধারণত যে আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশন করা হবে সেই আকরিক ব্যতীত অন্যান্য কিছু পদার্থ আকরিকের সাথে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। আকরিকের সাথে মিশ্রিত থাকা এসব পদার্থকে অপদ্রব্য বা এনিমল বলে। কাজেই আকরিককে যখন চূর্ণ-বিচূর্ণ করে পাউডারের দানায় পরিণত করা হয় তখনো সেই পাউডার দানার মধ্যে বিভিন্ন অপদ্রব্য বা খনিজমল থাকে। যেমন—বক্সাইট আকরিককে খনি থেকে তোলার সময় বক্সাইট আকরিকের সাথে খনিজমল হিসেবে বালি মিশ্রিত থাকে। এই খনিজমলসমূহকে দূর করে বিশুদ্ধ আকরিক পাওয়ার জন্য যে পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় তাকে আকরিকের ঘনীকরণ বলা হয়। আকরিকের  ঘনীকরণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন: হাইড্রোলাইটিক পদ্ধতি, চৌম্বকীয় পৃথকীকরণ, ফেনা ভাসমান পদ্ধতি, রাসায়নিক পদ্ধতি ইত্যাদি। 

 

হাইড্রোলাইটিক পদ্ধতি(Hydrolytic Method)
 

এ পদ্ধতিটি সাধারণত ব্যবহৃত হয় অক্সাইড আকরিকের ক্ষেত্রে। অক্সাইড আকরিকের কণাগুলো ভারী হয়। আর এতে থাকা অপদ্রব্যগুলো কিন্তু তুলনামূলক হালকা হয়। এই পদ্ধতিতে ১টি কম্পমান হেলানো খাঁজকাটা টেবিলের মধ্যে আকরিককে ঢালা হয়, এই আকরিকের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত করা হয়। এতে ভারী আকরিক ঘনীভূত হয়ে খাঁজের মধ্যে পড়ে থাকে এবং হালকা খনিজমলসমূহ পানির প্রবাহে ধৌত হয়ে চলে যায়। এভাবে আকরিক থেকে খনিজমলসমূহ চলে যাবার পর আকরিক গাঢ় হয়।
 

ফেনা ভাসমান পদ্ধতি (Proth Floatation Method) 

এ পদ্ধতিতে সালফাইড আকরিকগুলোকে ঘনীকরণ করা হয়। একটি বড় ট্যাংকে আকরিক নিম্নে এর মধ্যে পানি দেওয়া হয়, তারপর এর মধ্যে অল্প অল্প করে তেল যোগ করা হয়। এরপর এই মিশ্রণের মধ্যে বায়ুপ্রবাহ চালনা করলে সালফাইড আকরিকগুলো তেলে দ্রবীভূত হয় এবং ফেনার আকারে ভেসে উঠে। ফেনাসহ আকরিক পৃথক করে নেওয়া হয় এবং খনিজমল পাত্রের তলায় পড়ে থাকে।
 

তেল ফেনা ভাসমান প্রণালির পরীক্ষা
 

উপকরণ: বালি, কেরোসিন, স্পেচুলা, তরল/গুঁড়া সাবান, ওয়াচ গ্লাস, ছিপিসহ একটি বড় টেস্টটিউব, চেলকোপাইরাইট, গ্যালেনা বা হেমাটাইট আকরিক গুঁড়ো
2. টেস্টটিউবের মুখে ছিপি লাগিরে ঝাঁকাও। বালি এবং খনিজ কি পৃথক হয়েছে?
3. টেস্টটিউবে একটু তরল/গুঁড়া সাবান এবং কয়েক ফোঁটা কেরোসিন যোগ করো।
4. টেস্টটিউবের মুখে ছিপি লাগিয়ে পুনরার ভালো করে ঝাঁকাও।

5. স্পেচুলা দিয়ে কিছুটা ফেনা ওয়াচ প্লাসে নিয়ে পরীক্ষা কর এতে খনিজ আছে কি না? 6. বালি তলানিতে পড়ে থাকে কিন্তু খনিজ টেস্টটিউবের উপরের অংশে ভাসমান থাকে।
 

চৌম্বকীয় পৃথকীকরণ পদ্ধতি
যখন খনিজমল বা আকরিক এদের মধ্যে যেকোনো একটি চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হয় তখন এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে চূর্ণীকৃত আকরিককে একটি ঘূর্ণায়মান বেল্টের উপর দিয়ে চালনা করা হয়। বেল্টটি চিত্রের মতো দুইটি ধাতব ঢাকার সাহায্যে ঘোরে। এই ধাতব ঢাকা দুইটির একটি চৌম্বক ধর্ম বিশিষ্টি। এই চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হয়ে খনিজমলযুক্ত আকরিকের চৌম্বক অংশটি চুম্বক ধর্ম বিশিষ্ট চাকার নিচে এবং কাছে স্তূপ আকারে জমা হয়। অন্যদিকে অচৌম্বক অংশটি একটু দূরে চিত্রের মতো জমা হয়। ফলে আকরিক খনিজমল থেকে পৃথক হয়ে যায়। ক্রোমাইট FeO.Cr2O3, ব্লুটাইল TiO2 এর মতো চৌম্বকধর্ম বিশিষ্ট আকরিক থেকে খনিজমল অপসারণ করার জন্য চুম্বকীয় পৃথকীকরণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

রাসায়নিক পদ্ধতি
যে সকল ক্ষেত্রে কোনো পদার্থ আকরিক বা খনিজমলের যেকোনো একটির সাথে বিক্রিয়া করে কিন্তু অন্যটির সাথে বিক্রিয়া করে না সে সকল ক্ষেত্রে আকরিক থেকে খনিজমল অপসারণ করার জন্য রাসায়নিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। যেমন: বক্সাইট থেকে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড পাবার জন্য রাসায়নিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। বক্সাইটের সাথে আয়রন অক্সাইড, টাইটেনিয়াম অক্সাইড, বালি ইত্যাদি খনিজমল মিশ্রিত থাকে। বক্সাইটের মধ্যে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH ) যোগ করে উত্তপ্ত করলে বক্সাইটের (Al2O3.2H2O) সাথে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH) বিক্রিয়া করে সোডিয়াম অ্যালুমিনেট (NaAlo) ও পানি তৈরি হয়।
 

Al2O3.2H2O+ 2NaOH    →          2NaAlO₂+ 3H,0
 

পরম সোডিয়াম অ্যালুমিনেটকে পানির সাথে বিক্রিয়া করালে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড এবং সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন হয়। সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড পানিতে দ্রবীভূত থাকে এবং অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড পাত্রের নিচে তলানি আকারে অধঃক্ষিত হয়।
 

NaAlO₂ + 2H₂O             →         Al(OH)3 + NaOH
 

অ্যালুমনিরাম হাইড্রোক্সাইডকে পৃথক করে এনে তাকে 1100°C তাপমাত্রার উত্তপ্ত করলে বিশুদ্ধ অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এবং পানি উৎপন্ন হয়।

 

(iii) ঘনীকৃত আকরিককে অক্সাইডে রূপান্তর 

ঘনীকৃত আকরিককে ভষ্মীকরণ বা তাপজারণ পদ্ধতিতে ধাতুর অক্সাইডে পরিণত করা হয়। আকরিকের ভষ্মীকরণ (Calcination of Ores ) আকরিকে উপস্থিত ধাতুকে বিজারিত করে পৃথক করার আগে ঘনীকৃত আকরিককে গলনাঙ্কের চেয়ে কম তাপমাত্রায় বাতাসের অনুপস্থিতিতে উত্তপ্ত করা হয়। এই প্রক্রিয়াকে ভষ্মীকরণ বলে। ভষ্মীকরণের ফলে আকরিক থেকে পানিসহ কার্বনেট, বাইকার্বনেট, হাইড্রোক্সাইড জাতীয় কিছু অপদ্রব্য কার্বন ডাই-অক্সাইড কিংবা পানি হিসেবে দূরীভূত হয়। এ সকল অপদ্রব্য দূর না করলে পরবর্তীতে এগুলো দূর করা কঠিন।

আকরিকের তাপজারণ
সাধারণত সালফাইড আকরিকের তাপজারণ করা হয়। সালফাইড আকরিককে গলনাঙ্কের চেয়ে কম তাপমাত্রায় বাতাসের উপস্থিতিতে উত্তপ্ত করা হয়৷ এর ফলে সালফাইড, ফসফরাস, আর্সেনিক ইত্যাদি উদ্বায়ী খনিজমল অক্সাইড হিসেবে দূরীভূত হয়।

(iv) ধাতব অক্সাইডকে মুক্ত ধাতুতে রূপান্তর
আকরিককে ভষ্মীকরণ বা তাপজারণ করায় যে ধাতব অক্সাইড পাওয়া যায় তাদেরকে বিজারিত করলে ধাতু পাওয়া যায়। বিভিন্নভাবে এ বিজারণ সম্পন্ন করা যায় যেমন, তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজারণ, কার্বন বিজারণ পদ্ধতি, স্ববিজারণ ইত্যাদি। ধাতুর সক্রিয়তা সিরিজে তাদের অবস্থানের উপর কোন পদ্ধতিতে বিজারণ সম্পন্ন করা হবে তা নির্ভর করে। তোমরা যেন সহজে সেটা বুঝতে পারো তার জন্য নিচের ছকটি দেওয়া হলো।

তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজারণ (Reduction by Electrolysis): সক্রিয়তা সিরিজে প্রদর্শিত উপরের দিকে অবস্থিত অধিক সক্রিয় ধাতু K, Na, Ca Mg Al ইত্যাদি ধাতুসমূহের জন্য তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজারণ সম্পন্ন করা হয়। নিচে অ্যালুমিনিয়ামের অক্সাইড থেকে তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশন পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো।
এই পদ্ধতিতে প্রথমে কঠিন অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডকে গলিয়ে তরল করতে হবে। অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড 2050°C তাপমাত্রায় গলে যায়৷ এত বেশি তাপমাত্রা তৈরি করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। যদি অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এর মধ্যে ক্রায়োলাইট (Na3AlF6) যোগ করা হয়, তাহলে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড 800°C-1000°C তাপমাত্রায় গলে যায়। গলিত Al2O3 এর মধ্যে Al3+ এবং O2- আয়ন থাকে।
 

A1203              2A13+ + 302-
 

গ্রাফাইট কার্বন এর আস্তরণযুক্ত একটি স্টিলের পাত্রের মধ্যে গলিত অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এবং ক্রায়োলাইট এর মিশ্রণ নেওয়া হয় এবং এর মধ্যে কয়েকটি কার্বন দণ্ড এমনভাবে প্রবেশ করানো হয় যাতে এটি স্টিলের পাত্রকে স্পর্শ না করে। এবার স্টিলের পাত্রকে ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্তের সাথে এবং কার্বন দণ্ডগুলোকে ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্তের সাথে যুক্ত করা হয়। বিদ্যুৎ প্রবাহের সাথে সাথে তড়িৎ বিশ্লেষণ শুরু হয়। তড়িৎ বিশ্লেষণকালে O2 - অ্যানোডে ইলেকট্রন ত্যাগ করে O2 গ্যাস তৈরি করে এবং দ্রবণে বিদ্যমান Al3+ ক্যাথোড থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করে Al ধাতুতে পরিণত হয়।

 

কার্বন বিজ্ঞারণ পদ্ধতি (Method of Carbon Reduction )
ধাতব অক্সাইড এর সাথে কার্বনকে উত্তপ্ত করে ধাতু নিষ্কাশন করা হয়। যেমন: ZnO থেকে 2n ধাতু, FeO থেকে Fe ধাতু, PbO থেকে Pb ধাতু কিংবা CuO থেকে Cu ধাতুকে এই পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় কার্বন বিজারণ পদ্ধতি। সক্রিয়তা সিরিজে প্রদর্শিত মধ্যম মানের সক্রিয় ধাতুসমূহকে এ পদ্ধতিতে বিজ্ঞারণ ঘটানো হয়।

স্ববিজারন (Auto Reduction): সক্রিয়তা সিরিজে অবস্থিত নিচের দিকে অবস্থিত কম সক্রিয় ধাতু Cu, Hg Ag ধাতুসমূহের অক্সাইড এর ক্ষেত্রে কোনো বিজারক যোগ না করে শুধু উত্তপ্ত করেও বিজারণ ঘটানো হয়। উদাহরণ হিসেবে মার্কারির আকরিককে এভাবে বিজারিত করা যায়:

HgS + O2            Hg (1) + SO2

 

(v) ধাতু বিশুদ্ধিকরণ
উপরে উল্লেখিত বিজারণ পদ্ধতিসমূহের মাধ্যমে প্রাপ্ত ধাতুসমূহ সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ হয় না। এতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অপদ্রব্য থেকে যায়। এ অপদ্রব্য দূর করতে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
 

বিগালক যোগ করার পদ্ধতি: উচ্চ তাপমাত্রায় কার্বন বিজারণ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত ধাতুর মধ্যে কিছু খনিজমল দ্রবীভূত থাকতে পারে। এই খনিজমল অপসারণ করার জন্য যে পদার্থ যোগ করা হয় তাকে বিগালক বলে। খনিজমল ক্ষারকীয় হলে এসিডিক বিগালক (SiO2) যোগ করা হয় এবং খনিজমল এসিডিক হলে তার মধ্যে ক্ষারকীয় বিগালক (CaO) যোগ করা হয়। বিগালক এবং খনিজমল একত্র হয়ে ধাতুর মল বা ধাতুমল তৈরি হয়। ধাতুর মল গলিত ধাতুতে দ্রবীভূত হয় না বলে উপর থেকে ধাতুমলকে গলিত ধাতু থেকে আলাদা করে ফেলা হয়। বিগলন প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত ধাতু বিশুদ্ধ নয়। এই অবিশুদ্ধ ধাতুকে তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে ধাতু বিশুদ্ধ করা হয়। নিচে ধাতু বিশুদ্ধকরণের জন্য তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
 

তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে ধাতুর বিশোধন: তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে ধাতুর বিশোধনে অবিশুদ্ধ ধাতুকে অ্যানোড এবং বিশুদ্ধ ধাতুর একটি পাতকে ক্যাথোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তড়িৎ বিশ্লেষ্য হিসেবে যে ধাতুকে বিশুদ্ধ করতে হবে তার লবণের দ্রবণকে ব্যবহার করা হয়। যখন তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয় তখন অ্যানোড থেকে ধাতুর পরমাণু ইলেকট্রন ত্যাগ করে আয়ন হিসেবে দ্রবণে প্রবেশ করে। অপরদিকে, ধাতব আয়ন ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিশুদ্ধ ধাতু হিসেবে ধাতপাতে জমা হয়। তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে কপার ধাতু ও অন্যান্য ধাতু বিশোধন করা হয়। নিচে তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে কপার ধাতুর বিশুদ্ধকরণ বর্ণনা করা হলো।
 

তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে কপার ধাতুর বিশুদ্ধকরণ: বিজারণ প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত কপার ধাতু 98% বিশুদ্ধ। একে তড়িৎ বিশোধন পদ্ধতি প্রয়োগ করে 99.9% বিশুদ্ধ কপার ধাতু তৈরি করা যায়৷ এক্ষেত্রে CuSO4 এর জলীয় দ্রবণ একটি পাত্রে নেওয়া হয়। এই পাত্রে যে ধাতবদণ্ডকে বিশুদ্ধ করতে হবে সেই অবিশুদ্ধ কপারদণ্ডকে ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্তের সাথে যুক্ত করা হয়। এটি অ্যানোড হিসেবে কাজ করে। একটি বিশুদ্ধ কপার দণ্ডকে ঐ ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্তের সাথে যুক্ত করা হয়। এটি ক্যাথোড হিসেবে কাজ করে। সাধারণত, অবিশুদ্ধ কপার দণ্ড মোটা থাকে এবং বিশুদ্ধ কপার দত্ত পাতলা থাকে।
 

এবার ব্যাটারির সাহায্যে দ্রবণের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহিত করলে অ্যানোড হিসেবে ব্যবহৃত অবিশুদ্ধ কপার দণ্ড থেকে Cu2+ আয়ন হিসেবে দ্রবণে চলে যায় এবং দ্রবণ থেকে Cu2. বিশুদ্ধ কপার দণ্ডে জমা হয়। এক্ষেত্রে অ্যালোভের জারণ বিক্রিয়া সংঘটিত হয় এবং ক্যাথোডের বিজারণ বিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।


 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion